ম্যানুফ্যাকচারীং বা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প হচ্ছে শিল্পায়নের মূল ভিত্তি । ধোলাইখাল সহ বাংলাদেশের বিদ্যমান লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর বর্তমানে পুরাতন টেকনোলজি অনুযায়ী কাজ করছে বিধায় এর কোয়ালিটি এবং উৎপাদনশীলতা আন্তর্জাতিক মানের নয় । ফলে স্থানীয় বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না । পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেজ না থাকাতে বিদেশী বিনিয়োগও বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে । এই সেক্টরকে উন্নত করতে হলে কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল (সিএনসি) মেশিন ব্যবহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন । ইতোমধ্যে কোনো কোনো স্থানীয় উদ্যোক্তা সিএনসি মেশিন আমদানী করে ম্যানুফ্যাকচারীং কাজ করার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কে উচ্চ বেতনে ভারত অথবা চীন থেকে অপারেটর হায়ার করতে হচ্ছে এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বিদেশ হতে এক্সপার্ট হায়ার করতে হচ্ছে । ফলে সিএনসি মেশিনের মাধ্যমে হাই টেক টেকনোলজি ব্যবহার ইকোনোমিক্যালি ফিজিবল হচ্ছে না ।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সেক্টরকে উন্নত করতে হলে কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল (সিএনসি) মেশিনের টেকনোলজি প্রর্বতন সহ কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য আধুনিক টেস্টিং ফ্যাসিলিটি এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি হিসাবে অত্যাধুনিক উচ্চমূল্যের ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিন সুবিধা প্রদান করার জন্য এই প্রকল্প প্রনয়ন করা হয়েছে । এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিএনসি মেশিনের জন্য দক্ষ ডিজাইন প্রকৌশলী, অপারেটর এবং মেইন্টেন্যান্স প্রকৌশলী স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষিত হবে যাদের মাধ্যমে সার্বজনীন ভাবে সিএনসি টেকনোলজি প্রবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলের চাহিদা পূরণ হবে পাশাপাশি উচ্চ বেতনে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মসংস্থান হবে।
এ ছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর তাদের প্রডাক্ট কোয়ালিটি উন্নত করার জন্য ম্যাটেরিয়্যালের গুনাগুন যেমনঃ কম্পোজিশন টেস্ট, টেন্সাইল টেস্ট, ম্যাটেরিয়্যাল ষ্ট্রাকচার ষ্টাডিসহ প্রয়োজনীয় সকল টেস্ট করে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রডাক্ট তৈরী করতে পারবে । রপ্তানীর ক্ষেত্রে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের জন্য এই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ফ্যাসিলিটি এবং বিশেষজ্ঞ সেবা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে । তাছাড়া অত্যাধুনিক এবং উচ্চ মূল্যের কমন ফ্যাসিলিটি স্থানীয় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রনোদনা হিসেবে কাজ করবে বিধায় বুয়েটসহ বিভিন্ন কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীগন বিদেশে গমন না করে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আকৃষ্ট হবেন। এক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় ও রপ্তানী কাজ সংগ্রহ এবং সহজ শর্তে ব্যাংক লোন প্রাপ্তি সহজতর হবে যার ফলে উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ সৃষ্টি হবে । উচ্চ প্রযু্ক্তির নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরীর ফলে ব্যাকওয়াড লিংকেজে সাব কন্ট্রাকটিং এর মাধ্যমে ধোলাই খালের মতো আরো অনেক ছোট ছোট ওয়ার্কশপ তৈরীর মাধ্যমে কারিগরি বিষযে ব্যাপক লোকবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় একটি ১০ তলা বিশিষ্ট নির্মানাধীন টুল ভবন রয়েছে। এই ভবনে আন্তর্জাতিক মানের মেশিন ওয়ার্কশপ, ক্লাস রুম, সেমিনার হল, লাইব্রেরী, ডাইনিং, কমন রুম, সাধারণ হোস্টেল, আন্তর্জাতিক ষ্টুডেনদের জন্য হোষ্টেল এবং রুফ টপে থ্রি-ষ্টার রেষ্টুরেন্ট সহ যাবতীয় আন্তর্জাতিক মানের সুবিধাসহ ম্যানেফ্যাকচারীং ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি স্বয়ং সম্পূর্ন ইনস্টিটিউট হবে। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়নে যাবতীয় সেবা ছাড়াও বুয়েটসহ বিভিন্ন কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএন, ইইউ, ওয়াল্ড ব্যাংক, জাইকা, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এবং যৌথভাবে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়ামসহ গবেষণা কাজ করা হবে।
টেস্টিং ফ্যাসিলিটি এবং এসএমই উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কমন ফ্যাসিলিটিসহ আধুনিক মেশিন সুবিধা প্রদান করার মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিটাক এর কার্যক্রম শক্তিশালী করার লক্ষ্যে টুল ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ধীন রয়েছে। টুলস ইনস্টিটিউট এর মেশিনারি ক্রয় করার সমস্ত প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। টুলস ইনস্টিটিউট এর ৮৫% মেশিনারি ইতোমধ্যে বিটাকে এসে পৌছেছে, ১৮% জাহাজে রয়েছে, বাকি ৭% চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ভবনের ফিনিশিং এর কাজ চলমান রয়েছে। গত ২৭/৪/২০২০ তারিখে একটি পিভিডি মেশিন ইনস্টল করা হয়েছে।
জুলাই'২০২০ পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৯৩.৫৭% এবং ভৌত অগ্রগতি ৯৪%।